,

শীতে নাকাল দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ফের জেঁকে বসেছে শীত। সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ শীতে নাকাল। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে হালকা বৃষ্টির পাশাপাশি বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীতের দাপটে উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশের জনজীবন একেবারেই বিপর্যস্ত।

চলতি শীত মৌসুমে শীতের পাশাপাশি শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপে এখন পর্যন্ত সারা দেশে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তবে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ শীতের কবলে পড়লেও আবহাওয়া অফিস আজ জানিয়েছে, এটিই এ মৌসুমের শেষ মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। দু’একদিনের মধ্যেই এ শৈত্যপ্রবাহ শেষে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করবে। ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, যে শৈত্যপ্রবাহ চলছে তা দু’একদিনের মধ্যে চলে যাবে। এরপর তাপমাত্রা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করবে। এ মৌসুমে শৈত্যপ্রবাহ আরও আসার সম্ভাবনা খুবই কম। রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ এবং রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল, টাঙ্গাইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, নিকলী ও সীতাকুণ্ড অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং কিছু কিছু এলাকায় তা অব্যাহত থাকতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন ৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় ১৪.১, রাজশাহীতে ৯.৩, রংপুরে ৯, খুলনায় ১১.৮, বরিশালে ৯.৭, সিলেটে ৯.৯, টট্টগ্রামে ১২.৮, ময়মনসিংহে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি বৃষ্টিপাতের কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের জনসাধারণকে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার পাশাপাশি বৃষ্টিপাত ও ঘন কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। এতে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম ভোগান্তি। ঘন কুয়াশা থাকায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। গত চারদিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি উত্তরের আরো কয়েকটি জেলায়। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

ঘন কুয়াশার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসি পাটুরিয়া সেক্টরের এজিএম খন্দকার তানভির হোসেন জানিয়েছেন, বুধবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে মাঝ পদ্মানদীতে কুয়াশার ঘনত্ব হঠাৎ করে বেড়ে যায়। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কুয়াশার ঘনত্ব কমে যাওয়ায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পুনরায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়।

চলতি শীত মৌসুমে শীতের পাশাপাশি শৈত্যপ্রবাহের প্রকোপে এখন পর্যন্ত সারাদেশে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়ে ৬৬ হাজার ১৮৭ জন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডায়রিয়ায় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৩ জন ও শীতজনিত অন্য রোগে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩২৯ জন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর এসব রোগে রোগীগুলো মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে ৬৬ হাজার ১৮৭ জন শ্বাসতন্ত্রের সমস্যাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং মারা গেছেন ২২ জন।

এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৩ জন ও মারা গেছেন ৫ জন এবং শীতজনিত অন্য অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩২৯ জন চিকিৎসা নিয়েছেন ও মারা গেছেন ৩০ জন। অর্থাৎ, মোট মৃত রোগীর সংখ্যা ৫৭। অন্য অসুস্থতার মধ্যে রয়েছে জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ, জ্বর ইত্যাদি।

এই বিভাগের আরও খবর